۶ آذر ۱۴۰۳ |۲۴ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 26, 2024
পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ তিন ওয়াক্তে
পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ তিন ওয়াক্তে

হাওজা / পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ/সালাত তিন ওয়াক্তে - পবিত্র কোরআন এবং সহীহ হাদিসের আলোকে।

সংগৃহীত এবং সংকলিত: মুহম্মাদ হোসায়েন (বাংলাদেশ)

পর্ব ১- পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ/সালাত তিন ওয়াক্তে - পবিত্র কোরআন এবং সহীহ হাদিসের আলোকে..

ফজর , জোহর , আসর , মাগরীব ও এশা এই ওয়াজীব নামাজগুলো আহলে সুন্নাত জামাতের মুসলিম ভাইবোনেরা আলাদা আলাদা সময় আদায় করে থাকেন । এই নিয়মটা অতি অবশ্যই সঠিক । কারন মহানবী (সাঃ) এই নিয়মের ব্যাপারে কোথাও কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেন নাই ।

অপর দিকে জাফরী ফিকহা অনুসরনকারী বার ইমামীয়া শীয়া মাযহাবের মুসলিম ভাইবোনেরা সুবেহ সাদিকের সময় ফজর নামাজ আদায় করে থাকেন । দুপুর বেলা জোহর নামাজ আদায় করার পরে একই বৈঠকে আসর নামাজ আদায় করেন । একইভাবে সন্ধাবেলায় মাগরীব নামাজ আদায় করার পরে একই বৈঠকে এশার নামাজ আদায় করে থাকেন । শীয়া মাযহাবের এইরকম একত্রে নামাজ আদায় করার নিয়ম বেশীরভাগ সুন্নি ভাই বোনদের কাছে ভুল বা বাতিল বলে মনে হয় ।

দয়া করে ভুলে যাবেন না যে , দুনিয়ার সকল মুসলমান সকলেই কিন্ত একই নবীর (সাঃ) উম্মত । এখানে যদি কেউ মহানবীর (সাঃ) সুন্নাত বা নিয়ম অনুসরন করে থাকে , তাহলে তাকে কি ভুল বা বাতিল বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার অবকাশ আদৌ থাকে কি ?

এবার আসুন , জেনে নেয়া যাক, পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ তিন ওয়াক্তে আদায় করার নিয়মের বিষয় স্বয়ং মহানবীর (সাঃ) হাদিসগুলো ।

সুপ্রিয় পাঠক ,

এই লেখাটিতে আমরা পবিত্র কোরআন , রাসুল (সাঃ) এবং মাসুম ইমামগন (আঃ) থেকে বর্ণিত প্রসিদ্ধ রেওয়ায়েতের আলোকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ তিন ওয়াক্তে আদায় এবং জোহর-আসর এবং মাগরিব-এশা একত্রে আদায় প্রসঙ্গে তথ্য-সমৃদ্ধ আলাচনা ও পর্যালোচনা করব ।

দুটি নামাজ অর্থাৎ জোহর-আসর এবং মাগরিব-এশা একত্রে আদায় প্রসঙ্গে বর্ণিত রেওয়ায়েতসমূহ । সুন্নী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ও প্রথম শ্রেণীর হাদিস গ্রন্থাবলী যেমন , সহীহ মুসলিম , সহীহ বুখারী , সহীহ তিরমিযী , মুয়াত্তা , মুসনাদে আহমাদ , সুনানে নাসায়ী এবং মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক প্রভৃতিতে দুটি নামায একত্রে আদায় তথা যোহর-আসর এবং মাগরিব-এশার নামায অনিবার্য কোন কারন যেমন , সফরে থাকা , বৃষ্টি , ভয়ভীতি কিংবা অনিষ্টের সম্ভাবনা ছাড়াই একত্রে আদায় সম্পর্কে ত্রিশটির চেয়েও অধিক সহীহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে ।

আর এগুলো মূলত: পাঁচজন প্রথম সারির রাবীদের থেকে বর্ণিত , যথা -

১-হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)

২-হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী (রাঃ)

৩-হযরত আবু আইয়ুব (রাঃ)

৪-হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর এবং

৫-হযরত আবু হুরাইরা ।

সম্মানীত পাঠকদের জ্ঞাতার্থে উক্ত রেওয়ায়েতগুলোর কিয়দাংশ এখানে তুলে ধরছি ।

এক )-

আবুজ্ জুবাইর ; সাঈদ ইবনে জুবাইর এবং তিনি হযরত ইবনে আব্বাসের (রাঃ) উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন , রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মদীনায় অবস্থানকালীন সময়ে কোনরূপ ভীত ও সফরের কারণ ছাড়াই যোহর ও আসরের নামায একত্রে আদায় করেছেন ।”

আবুজ জুবাইর বলেন যে , আমি সা’দ বিন জুবাইরের নিকট প্রশ্ন করলাম , কেন রাসুল (সঃ) এমনটি করলেন ?

জবাবে তিনি বলেন , আমিও অনুরূপ প্রশ্নটি ইবনে আব্বাসের নিকট জিজ্ঞাসা করেছি । উত্তরে তিনি বলেছেন , "রাসুলের (সাঃ) উদ্দেশ্য ছিল যে , তাঁর উম্মতের মধ্যে কেউ যেন বাড়তি চাপের শিকার না হয় ।”

সূত্র - সহীহ মুসলিম , ২য় খন্ড পৃ. ১৫১ ।

দুই )-

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে , "মহানবী (সাঃ) মদীনাতে কোনরূপ ভয় কিংবা বৃষ্টির আশংকা ছাড়াই যোহর-আসর এবং মাগরিব ও এশার নামায একত্রে আদায় করতেন ।” হযরত ইবনে আব্বাসের (রাঃ) নিকট জিজ্ঞাসা করা হয় । এক্ষেত্রে রাসুলের (সাঃ) উদ্দেশ্য কি ছিল ?

জবাবে তিনি বলেন , রাসুল (সাঃ) চেয়েছিলেন যে , কোন মুসলমান যেন নামায আদায়ের ক্ষেত্রে কষ্টের শিকার না হয় ।

সূত্র - সহীহ মুসলিম, ২য় খন্ড, পৃ. ১৫২ ।

তিন )-

আব্দুল্লাহ বিন শাকিক বলেন , "একদা ইবনে আব্বাস আসরের নামাযের পর আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন । এমন সময় সূর্য অস্তমিত হয় এবং আকাশে নক্ষত্র পরিদৃষ্ট হয় । উপস্থিত লোকদের মধ্যে কেউ কেউ ‘নামাজ’ ‘নামাজ’ বলে আওয়াজ তুলেন । অতঃপর বনী তামিম গোত্রের জনৈক ব্যক্তি সামনে এসে একাধারে ‘নামাজ’ ‘নামাজ’ বলে চীৎকার করতে থাকে । তখন ইবনে আব্বাস বলেন , হে অজ্ঞ ! তুমি কি আমাকে রাসুলের (সাঃ) সুন্নাতের শিক্ষা দিতে চাও ? রাসুল (সাঃ) যোহর-আসর এবং মাগরিব-এশার নামায একত্রে আদায় করেছেন ।

আব্দুল্লাহ ইবনে শাকিক বলেন , আমার মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয় । এ কারণে আমি আবু হুরাইরার নিকট এসে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলাম । তিনি ইবনে আব্বাসের কথার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন।”

সূত্র - সহীহ মুসলিম, ২য় খন্ড, পৃ. ১৫১ , ১৫২ ।

চার )-

জাবের ইবনে জায়েদ বলেন , ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে , রাসূল (সাঃ) সাত রাকাত (মাগরিব ও এশার) নামায একই সময়ে এবং আট রাকাত (যোহর ও আসরের) নামায একই সময়ে আদায় করেছেন ।”

সূত্র - সহীহ বোখারী , ১ম খন্ড , পৃ. ১৪০ ।

পাঁচ )-

সাঈদ ইবনে জুবাইর হযরত ইবনে আব্বাসের (রাঃ) উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন , "মহানবী (সাঃ) যোহর-আসর এবং মাগরিব-এশার নামাজ একত্রে আদায় করেছেন । অথচ তখন কোন ধরনের ভয় কিংবা বৃষ্টির আশংকা ছিল না । ইবনে আব্বাসের নিকট জিজ্ঞাসা করা হয় যে , এক্ষেত্রে রাসুলের (সাঃ) উদ্দেশ্য কি ছিল ? জবাবে তিনি বলেন , তিনি চেয়েছিলেন যে , তাঁর উম্মত যেন কোনরূপ কষ্টের শিকার না হয় ।”

সূত্র - সুনানে তিরমিযী, ১ম খন্ড , পৃ. ১২১, হাদীস নং ১৮৭ ।

ছয় )-

আহমাদ ইবনে হাম্বালও স্বীয় হাদিস গ্রন্থে অনুরূপ একটি হাদিস হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন ।

সূত্র - মুসনাদে আহমাদ, ১ম খন্ড , পৃ.২২৩ ।

সাত )-

সুন্নি মাযহাবের অন্যতম মনীষী ইমাম মালেক (রহঃ) স্বীয় ‘আল মুয়াত্তা’ গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাসের (রাঃ) উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন , "রাসুল (সাঃ) যোহর-আসর এবং মাগরিব-এশার নামায একত্রে আদায় করেছেন । অথচ তখন কোনরূপ ভয় কিংবা বৃষ্টির আশংকা ছিল না ।”

সূত্র - আল মুয়াত্তা, ১ম খন্ড , পৃ. ১৪৪ ।

আট )-

মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর হতে বর্ণিত , "মহানবী (সাঃ) সফর অবস্থাতে না থাকা সত্ত্বেও যোহর ও আসরের নামাযদ্বয় একত্রে আদায় করেন । কেউ ইবনে উমরের নিকট এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন , কেন রাসুল (সাঃ) এমনটি করলেন ? জবাবে তিনি বলেন , এমনটি করার কারণ হচ্ছে যদি কেউ এ দুটি নামায একত্রে আদায় করে তাহলে যেন তাঁর উম্মতের কোন ব্যক্তি কষ্টের সম্মুখীন না হয় (কেউ যেন এক্ষেত্রে আপত্তি না করে) ।”

সূত্র - মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ২য় খন্ড , পৃ. ৫৫৬ ।

নয় )-

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত - "রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মদীনাতে যোহর-আসরের এবং মাগরিব-এশার নামাজ একত্রে আদায় করেন , যাতে তাঁর উম্মত এ সুযোগ ব্যবহার করতে পারে । যদিও সেক্ষেত্রে কোন ধরনের সমস্যা কিংবা ভয়-ভীতির আশংকা না থাকে ।”

সূত্র - মায়ানিউল আসার, ১ম খন্ড , পৃ. ১৬১ ।

দশ )-

আবু হুরাইরা হতে বর্ণিত , "রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মদীনায় কোন ধরনের ভয় কিংবা অনিষ্টের আশংকা (শত্রুদের পক্ষ হতে) না থাকা সত্ত্বেও দুটি নামাজ একত্রে আদায় করেছেন ।”

সূত্র - মুসনাদে আল বাজ্জায, ১ম খন্ড , পৃ. ২৮৩ ।

এগার )-

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ হতে বর্ণিত , "রাসুল (সাঃ) মদীনায় যোহর-আসরের এবং মাগরিব-এশার নামাজ একত্রে আদায় করেন । সাহাবীদের মধ্যে একজন তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বলেন , আমি এ কাজটি এজন্য করেছি যে , আমার উম্মতের লোকেরা যেন কষ্টের শিকার না হয় ।”

সূত্র - আল মো’জামুল কাবীর, তাবরানী, ১ম খন্ড , পৃ. ২১৯, হাদীস নং ১০৫২৫ ।

এখানে দুটি বিষয় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে , যথা -

১- উপরোক্ত হাদিস সমূহের সারাংশ - উপরোক্ত হাদিসসমূহ সুন্নি মাযহাবের সবচেয়ে পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য হাদিস গ্রন্থাবলী হতে উদ্ধৃত । আর এগুলোর সনদও প্রথম শ্রেণীর সাহাবীদের সাথে সম্পৃক্ত । এখানে দুটি বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে ।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .